
ওশান নিউজ প্রতিবেদক : অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের বিশেষ সহকারী মনির হায়দার জানিয়েছেন, ঐকমত্য কমিশনের মোট বরাদ্দই ছিল ৭ কোটি টাকা, ৮৩ কোটি নয়।
সম্প্রতি ঐকমত্য কমিশনের ব্যয় নিয়ে মোশাররফ আহমেদ ঠাকুরের করা একটি ভুয়া মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এ তথ্য জানান তিনি।
মনির হায়দার জানান, ঐকমত্য কমিশনের মোট বরাদ্দই ছিল ৭ কোটি টাকা, ৮৩ কোটি নয়। এর মধ্যে প্রায় ২৩ শতাংশ অর্থ ব্যবহার করা হয়েছে।
আর অবশিষ্ট টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরত দেওয়া হয়েছে।
তিনি জানান, এই ব্যয় অন্তর্ভুক্ত ছিল কমিশনের নিরাপত্তা, পরিবহন, খাওয়াদাওয়া ও অন্যান্য প্রশাসনিক খরচ।
মোশাররফ আহমেদের সেই প্রমাণহীন মন্তব্যকে আরো বিকৃত করে প্রচার করেছে আওয়ামী-প্রপাগান্ডা পেজ ‘আজকের কণ্ঠ’ ও শেখ হাসিনার সাবেক উপ-প্রেসসচিব আশরাফুল আলম খোকন।
সম্প্রতি নিউজ টোয়েন্টিফোর চ্যানেলের ‘জনতন্ত্র গণতন্ত্র’ টক শোতে বিএনপি নেতা ও শিক্ষক মোশাররফ আহমেদ ঠাকুর বলেন, মাত্র ৯ মাসে আমি দেখলাম যে বিভিন্ন সোর্স থেকে, ৮৩ কোটি টাকার খাওয়াদাওয়া করেছে সবাইকে নিয়ে ৮৩ কোটি খাওয়াদাওয়া করেছেন এবং সেখান থেকে যে বেতন-ভাতা নিয়েছেন।
এদিকে গ্লোবাল টেলিভিশন (গ্লোবাল টিভি) এর প্রশ্নগুলো সহজ শীর্ষক টক শোতেও দেখা যায়, মোশাররফ আহমেদ ঠাকুর ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রিয়াজকে উদ্দেশ করে বলছেন, ৮৩ কোটি টাকা খরচ করছেন ৯ মাসে।
৮৩ কোটি টাকা খরচ করে আলী রীয়াজ আপনি পালালেন কেন? আপনি পালালেন কেন? এতে স্পষ্টত বোঝা যাচ্ছে, মোশাররফ আহমেদ ঠাকুর ঐকমত্য কমিশনের যাবতীয় কাজের খরচ হিসেবে ৮৩ কোটি টাকার কথা বলেছেন।
ঐকমত্য কমিশনের যাবতীয় কাজের খরচ নিয়ে মোশাররফ আহমেদ ঠাকুরের বক্তব্য যে সত্য নয়, তা প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার প্রদত্ত তথ্য থেকে স্পষ্ট।
মোশাররফ আহমেদ টক শোতে দাবি করেছেন, তিনি বিভিন্ন সোর্স থেকে এই তথ্যগুলো পেয়েছেন।
কিন্তু সেসব সোর্স কী বা কারা, সেগুলোর গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু,
তা নিয়ে কিছু বলেননি।
পাশাপাশি টক শোতে মোশাররফ আহমেদ ঠাকুর অধ্যাপক আলী রিয়াজকে উদ্দেশ করে ‘পালালেন কেন’ প্রশ্নও করেছেন।
বাস্তবে ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ শেষ হয়েছে ৩১ অক্টোবর। স্বাভাবিকভাবেই অধ্যাপক আলী রিয়াজ আবার ইলিনয় স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর শিক্ষকতা পেশায় ফিরেছেন, যেখানে তিনি কমিশনের কাজের জন্য ছুটি নিয়েছিলেন।
মোশাররফ আহমেদ ঠাকুর এটি ‘পালানো’ হিসেবে উপস্থাপন করে ষড়যন্ত্রতত্ত্বের ইঙ্গিত দিয়েছেন, যা প্রকৃত বাস্তবতার সঙ্গে মেলে না।
কিন্তু মোশাররফ আহমেদ ঠাকুরের এই দেওয়া এই ভুয়া তথ্যটিকে আরো বিকৃত করে আশরাফুল আলম খোকন একে ‘খাবারের বিল’ আখ্যা দিয়ে মাসিক খাবারের বিল কত হয়েছে সে বিশ্লেষণ করে পোস্ট দিয়েছেন।
আজকের কণ্ঠ নামক পেজটিও অনুরূপ ‘বিশ্লেষণ’ দিয়ে একটি পোস্ট করে, যা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।
কিছুক্ষণ পর পেজ থেকে ঘণ্টায় খাবারের বিল কত উঠেছে তা নিয়ে পোস্ট দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, গত ৮ আগস্ট ঐকমত্য কমিশনের খরচের ব্যাপারে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করলে, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার বলেন, কমিশন নিজে কোনো খরচ করেনি। ঐকমত্য কমিশন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের অধীনে কাজ করে, একে সাচিবিক সহায়তা দেয় আইন মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয়ের ইচ্ছায় সংসদ বিষয়ক সচিবালয়।
এসংক্রান্ত যাবতীয় খরচ নির্বাহ করে এই দুই সচিবালয়।
অর্থাৎ ঐকমত্য কমিশন ‘৮৩ কোটি’ টাকা খরচ করেছে বলে যে তথ্য ছড়ানো হচ্ছে, তা মিথ্যা।
পাশাপাশি এটি ‘খাবারের বিল’ হিসেবে উপস্থাপন করা
যে ফটোকার্ড ও পোস্টগুলো সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো হচ্ছে, সেগুলোও অপতথ্য।